গোসলের কতিপয় মাসায়েল
পূর্বেই বলা হয়েছে, ফরয ও ওয়াজিব গোসল ছাড়া আমরা শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য যে গোসল করে থাকি, তাতে শরীয়তের কোন হুকূমও নেই। আর তারজন্য কুরআন ও সুন্নাহতে কোন প্রকার আদেশ নিষেধও নেই। কিন্তু গোসল সম্পর্কে যত কথা, শরীয়তের হুকূম-মাসয়ালা ইত্যাদি সবই ফরয গোসল শরীয়ত মত আদায় করে পবিত্রতা হাসিল করার জন্য। এখানে গোসলের যেসব ফরয, সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হবে, তা সবই ফরয গোসলের জন্য। তবে সাধারণ গোসলেও এসব আদায় করে নিয়ম মাফিক গোসল করলে সাওয়াব পাওয়া যায়। এখন সেসব বিষয় আলোচিত হবে।
ফরয গোসলে ফরয তিনটি। যথাঃ
১। গড়গড়ার সাথে কূলি করা, রোযাদার হলে গড়গড়া করতে হবে না। কারণ, তাতে গলার মধ্যে পানি প্রবেশ করে রোযা ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
২। দু'নাকের নরম গোশত পর্যন্ত পানি পৌঁছে দেয়া, এটাও রোযাদার হলে করবে না। এতেও রোযা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩। সমস্ত শরীর ভালভাবে ধৌত করা, যদি পুকুর, খাল কিংবা নদীতে গোসল করে, তবে তাতে সরাসরি নেমে শরীর মর্দন করবে, আর ওপরে বালতি বা কলসের পানি দ্বারা গোসল করলে ভালভাবে গায়ে পানি ঢালতে হবে। মনে রাখতে হবে, এর যে কোন একটি বাদ পড়লে যেমন কুলি, নাকে পানি দেয়া এবং সমস্ত শরীরের মধ্যে একটি পশম বা তার সম পরিমাণ স্থান শুকনো থাকলে ফরয গোসল আদায় হবে না; অপবিত্র থেকে যাবে।
ফরয গোসলে সুন্নত পাঁচটি। যথাঃ
১। দু'হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
২। গোসল করার পূর্বে নারী হোক অথবা পুরুষ হোক, তাদের লজ্জাস্থান ভালভাবে ধৌত করে ফেলা।
৩। শরীরের অন্যত্র কোন প্রকার নাপাক লেগে থাকলে তা পূর্বেই ধুয়ে নিতে হবে।
৪। পা ধৌত করা ছাড়া অবিকল নামাযের ওযুর ন্যায় ওযু করে নেয়া।
৫। সমস্ত শরীরে ভালভাবে পানি বইয়ে দেয়া। কলস বা বালতির পানি দ্বারা দাঁড়িয়ে গোসল করলে পায়ে তিনবার পানি দেয়ার পর উক্ত স্থান হতে সরে পা তিনবার ধৌত করতে হবে। আর পুকুর কিংবা নদীতে গোসল করলে পায়ে তিনবার পানি দেয়ার বদলে তিনটি ডুব দিলেই সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
গোসলের মাঝে একটিই মাত্র মুস্তাহাব। তাহলো গোসলের সময় শরীর ভালভাবে মর্দন করা। সেটা দুটো কারণে-
১। ফরয গোসল হলে কোন স্থান চুল পর্যন্ত শুকনো থাকার সন্দেহ থাকবে না।
২। শরীরে ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আল্লাহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন। গোসলের নিয়মের মধ্যে কোন ওয়াজিব নেই। শুধু ফরয, সুন্নত এবং মুস্তাহাব আছে।
মাসায়ালাঃ
১। কোন মহিলার ফরয গোসল করার সময় চুল যদি খোলা এবং লম্বাভাবে ঝোলানাে থাকে, তাহলে গোসলের সময় সব চুল ভেজানাে ফরয। কিন্তু শক্ত করে খোঁপা বাধা থাকলে খোঁপা খুলে তা ভেজানাের প্রয়োজন হয় না। শুধু চুলের গোড়ার পানি পৌছালেই চলবে।
২। মহিলাদের শরীরে বা নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে চেড়ে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। এর ভিতর কোন স্থান শুকনো থাকলে তাতে ফরয গোসল আদায় হবে না।
৩। পুরুষদের মাথায় বেশি চুল কিংবা অবৈধভাবে লম্বা চুল, খোঁপা বা বেনী থাকলে তা খুলে ভালভাবে ধৌত করতে হবে। অন্যথায় তার ফরয গোসল আদায় হবে না।
ফরয গোসলের নিয়ত
যদি কারো উপর গোসল ফরয হয়, তবে সে মনে মনে নিম্নোক্ত নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে গোসলের ফরজ ও সুন্নত পালন সহকারে গোসল শুরু করবে। গোসলের নিয়তটি হচ্ছে-
نَوَيْتُ الْغُسْلَ لِرَفْعِ الْجَنَابَتِه
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুল গুসলা লিরাফই'ল জানাবাতি।
অর্থঃ আমি নাপাকি দূর করার জন্য গোসলের নিয়ত করছি।
মাসয়ালাঃ গোসল সম্পর্কে আরো কিছু জানা আবশ্যক যা নিম্নে আলোকপাত করা হলো।
১। ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে একটি পশমের গোড়াও শুকনা থাকবে না।
২। গড়গড়ার সাথে কূলি না করলে গোসল হবে না।
৩। নাকের ভিতর পানি না দিলেও গোসল হবে না।
৪। আংটি গহনা কিংবা অন্য কোন কারণে শরীরের কোন জায়গা শুকনো থাকলে গোসল হবে না।
৫। গোসল শেষে কোন স্থান যদি শুকনো বলে মনে হয়, তবে সে স্থানটুকু ধৌত করলেই চলবে। এর জন্য আবার গোসল করতে হবে না। অনুরূপভাবে কূলি করার কথা বা নাকে পানি দেয়ার কথা ভুলে গেলে, তখন শুধুমাত্র কূলি করলে অথবা নাকে পানি দিলে পূর্ণ হয়ে যাবে। নতুবা গোসল হবে না। গোসলের পূর্বে যেমন নাপাক ছিল, তেমনই থাকবে।
৬। নখ কিংবা অন্য কোথাও আটা, চুন বা মাটি থাকলে, যার কারণে শরীরের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছে, তখন তা উঠিয়ে দিতে হবে।