পবিত্র অপবিত্রের মাসায়েল ও পাক নাপাকের মাসায়েল।

 পবিত্র অপবিত্রের মাসায়েল ও পাক নাপাকের মাসায়েল

          কতিপয় পবিত্র-অপবিত্রের মাসায়েল

১। মশা, মাছি বা ছাড়পোকার রক্ত পবিত্র, সুতরাং তা শরীরে বা কাপড়ে লাগলে তা নিয়ে নামায আদায় করলে জায়েয হবে।

২। অপবিত্র বস্তু মেশানাে তৈল কোন অঙ্গে মাখলে অঙ্গ নাপাক হয়। ঐ অঙ্গ তিনবার রগড়িয়ে ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।


৩। অপবিত্র বস্তু মিশানো মেহেদী পাতার রং হাতে মাখলে তা ভালভাবে তিনবার ধুলেই পবিত্র হবে। এজন্য হাতের রং উঠিয়ে ফেলতে হবে না।


8। কাফেরদের বস্ত্র পবিত্র অপবিত্র ইহা সন্দেহের কথা, এরূপ কাপড় পড়ে নামায পড়লে মাকরূহ হবে।


৫। কুকুরের পশম বা দেহ নাজাসাত নয়, তবে তার মুখের লালা পবিত্র নয়।


৬। ভেজা কাপড় পড়া অবস্থায় বাহ্য মাকাম হতে হাওয়া বের হলে ঐ কাপড় অপবিত্র হয় না।


৭। নাপাক বিছানায় শয়ন করলে শরীর বা পরিহিত বস্ত্র অপবিত্র হবে না। অবশ্য ঘর্ম নির্গত হয়ে নাজাসাতের সঙ্গে মিলে ঐ ঘর্ম দেহে বা বস্ত্রে লাগলে তা অপবিত্র হয়ে যায়।


৮। নাপাক পানিতে ভেজানাে কাপড়ের ওপর শুকনো পবিত্র কাপড় রাখলে তা অপবিত্র হয় না, তবে ঐ কাপড় হতে যদি তার নাজাসাত বা গন্ধ শুকনো কাপড়ে লেগে যায় অথবা ভেজা অপবিত্র কাপড়ের পানিতে যদি শুকনো কাপড়ও একবারে ভিজে যায় তবে তা অপবিত্র হবে।


৯। জুতো কিংবা চামড়ার মোজায় রক্ত, বীর্য অথবা পাতলা গোবর লেগে শুকিয়ে গেলে যদি তা ঘামে কিংবা অন্য কিছুতে ঘসে উঠিয়ে ফেলা সম্ভব হয়, তবে তাতেই পবিত্র হয়ে যায়; পানি দ্বারা ধোয়ার প্ৰয়োজন হয় না।


১০। অবশ্য ঘন নাজাসাত জুতোয় বা মোজায় লাগলে পানি দ্বারা ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।


১১। বেশি ঘন নাজাসাত জুতোয় লাগলে তা ঘসে উঠিয়ে ফেলতে পারলেই পবিত্র হয়ে যায়।


১২। কোন বৃহদাকার পবিত্র বিছানার চাদরের এক কোণে সামান্য জায়গায় নাজাসাত লাগলে সম্পূর্ণ ফরাশ বা বিছানা অপবিত্র হয় না। অর্থাৎ নাজাসাত লাগা কােণা বাদ দিয়ে তার অন্য কােণায় নামায আদায় করলে নামায আদায় হবে।


১৩। প্রস্রাব লাগানো কাপড়ের সাথে শুকনো কাপড় মিশিয়ে রাখলে তা অপবিত্র হয় না। অবশ্য প্রস্রাব বা তার গন্ধ লেগে গেলে অপবিত্র হয়ে যায়।


১৪। জুতো কিংবা মোজােয় তরল নাজাসাত লাগলে তা ধুয়ে পবিত্র করতে হয়।


১৫। নাজাসাত মিশ্রিত সুরমা বা কাজল চোখে দিলে তা না ধুয়ে নামায আদায় করা যায়, তবে চোখের পানিতে তা ভিজে গড়িয়ে গেলে না ধুয়ে নামায আদায় করা জায়েয নয়।


১৬। নাজাসাত মিশ্রিত রং কাপড়ে লাগলে ঐ কাপড় ধুয়ে নিংড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত রঙিন পানি পড়তে থাকবে ততক্ষণ ঐ কাপড় পবিত্র হবে না। পানি রং শূন্য হলে কাপড় পবিত্র হয়েছে বুঝতে হবে।


১৭। নাপাক মাটির ওপর পাক বালু বা মাটি বিছিয়ে তার ওপর নামায আদায় করলে বৈধ হবে।


১৮। শিশু সন্তান মার দুধ পান করে সাথে সাথে ঐ দুধ মার শরীরে বমি করে ফেলে যদি ঐ বমি তিনবার চেটে উঠিয়ে নেয় তবে ঐ স্ত্রীলোকের শরীর অপবিত্র হয়ে যাবে।


১৯। গােবর অপবিত্র বটে; কিস্তু শুকনো গােবর জ্বালানাে ধোয়া কাপড়ে লাগলে সে কাপড় অপবিত্র হয় না।


২০। চুন-সুরকী ছাড়া ইটের ওপর নাজাসাত লাগলে ঐ ইট ধুয়ে পবিত্র করতে হয়। ঐরূপ নাজাসাত শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও না ধোয়া পর্যন্ত পবিত্র হবে না।


২১। চুন-সুরকী দ্বারা প্রলেপ যুক্ত ইটে নাজাসাত লেগে তা শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে তার ওপর নামায আদায় করা যায়; কিন্তু ঐরূপ ইট দ্বারা তায়াম্মুম বৈধ নয়।


২২। ঠিক ঐরূপ মাটিতে নাজাসাত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে সে মাটিতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা যায় কিন্তু ঐ মাটিতে তায়াম্মুম বৈধ নয়।


২৩। যদি এমন কোন পুরু তক্তার এক পিঠে নাজাসাত লাগে যে, সেটাকে মাঝখান থেকে চিড়ে দু’ভাগ করা যায়, তবে ঐ তক্তার অপর পিঠে দাড়িয়ে নামায পড়া জায়েয। কিন্তু তক্তা যদি এরূপ পাতলা হয় যে, মাঝ খান থেকে চিড়ে দু'ভাগ করা সম্ভব নয়। তবে ঐ তক্তার ওপর দাড়িয়ে নামায পড়া বৈধ নয়।


২৪। দেহে বা কাপড়ে আলকাতরা লাগলে তা নিয়ে নামায পড়া বৈধ নয়, যেহেতু আলকাতরা পবিত্র বস্তু নয়।


২৫। হালাল জীবের পঁচা ডিম পবিত্র।


২৬। জীবিত ব্যক্তির মুখের লালা পবিত্র, মৃতের লালা পবিত্র নয়।


২৭। মানুষের কফ সর্দি কাশি অপবিত্র নয়। তা কাপড়-চোপড় বা শরীরে লাগলে তা নিয়ে নামায বৈধ।


২৮। কুকুরের দেহ বা পশম অপবিত্র না হলেও তার ভেজা দেহ অপবিত্র। অতএব তাদের ভেজা দেহের সাথে কাপড় চোপড় লাগলে তা নিয়ে নামায আদায় করা জায়েয নয়।


২৯। মাছের বিষ্ঠা পবিত্র। তা শরীর বা কাপড়ে লাগলে ধুয়ে নামায পড়া যায়।


৩০। বমি নাপাক বস্তু। সেটা শরীর বা কাপড়ে লাগলে ধুয়ে ফেলে নামায আদায় করতে হয়।


৩১। বাঘের চর্বি নাপাক। যে কান রোগ ব্যধিতে তা শরীরে মালিশ করলে রগড়িয়ে ধুয়ে উঠিয়ে নামায আদায় করতে হয়।


৩২। মানুষ, শুকর এবং সাপ ছাড়া অন্য যে কোন জন্তুর চামড়া শুকিয়ে দাবাগত করে তার ওপর নামায আদায় করা যায় (যেহেতু সেগুলোর চামড়া ভালভাবে শুকালে পবিত্র হয়ে যায়)।


৩৩। গোয়াল ঘরে কিংবা পায়খানার ছাদে যদি নাজসাত না থাকে তবে দাড়িয়ে নামায পড়লে মাকরূহের সাথে নামায আদায় হবে।

তরল পদার্থের পাক-নাপাকের মাসায়েল

১। নদ নদী, সাগর, পুকুর, হ্রদ প্রভৃতি বৃহৎ জলাশয়ের পানি তিন অবস্থার যে কোন একটি পরিবর্তন হলে অর্থাৎ রং, স্বাদ এবং ঘ্রাণ যে কোন একটি পরিবর্তন হলে উহা নাপাক বুঝতে হবে। ঐ তিন অবস্থায় যে কোন একটির পরিবর্তন ঘটলে সেই পানি দ্বারা ওযু করা বৈধ হবে না।


অবশ্য ইন্দিরা, কূপ, বরফ বা বৃষ্টির পানির তিন অবস্থার যে কোন একটি অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও নাপাক হয় না; তা দ্বারা ওযু করা চলে।


২। পানির সাথে অন্য বস্তু মিশে তার স্বাদ, রং এবং ঘ্রাণ এ তিনটি অবস্থার যে কোন একটি পরিবর্তন হলে তা দ্বারা ওযু গোসল জায়েয হবে না। ঐ পানি কোন মাটিতে মিশলে। সেই মাটির দ্বারা তায়াম্মুমও বৈধ হবে না।


৩। কোন পবিত্র বস্তু ধোয়া পানি দিয়ে ওযু গোসল করা বৈধ।


৪। মৃত ব্যক্তির ওযু গোসলে ব্যবহৃত পানি অপবিত্র হয়ে যায়। অতএব তা দিয়ে ওযু গোসল করা বৈধ নয়।


৫। ওযু গোসলে ব্যবহৃত পানি দ্বারা পুনরায় ওযু গোসল করলে মাকরূহের সাথে জায়েয হবে। এরূপ পানি পান করাও মাকরূহ।


৬। অল্প পানিতে নাজাসাতে গলীজা পতিত হলে ঐ পানি নাজাসাতে গলীজায় পরিণত হয়।


৭। পাক পানি দিয়ে এন্তেঞ্জা করার পরে উদ্ধৃত্ত পানি দিয়ে ওযু গোসল করার কোন দোষ নেই।


৮। পাক পানি দিয়ে কোন অপবিত্র বস্তু ধুলে সেই মুস্তামাল (ব্যবহৃত) পানিও অপবিত্র হয়ে যায়। এরকম পানি কোন দ্রব্যে লাগলে যদি ঐ পানি প্রথমবার ধোয়ার পানি হয়, তবে ঐ দ্ৰব্যও অপবিত্র হয়ে যায়।


৯। কোন জলাশয় বা কূপ দশ হাত দৈর্ঘ্য ও দশ হাত প্রস্থ আয়তন অপেক্ষা বৃহদায়তন বিশিষ্ট হলে তার পানিতে নাজাসাতে গলীজা ও নাজাসাতে খফীফা যা ই পডুক না কেন ঐ পানি অপবিত্র হবে না।


১০। পানিতে কোন নাজাসাত পতিত হয়ে পানি ছিটে শরীর কাপড়ে লাগলে যদি তাতে নাজাসাতের কোন চিহ্ন না পাওয়া যায়, তবে তাতে শরীর বা কাপড় অপবিত্র হবে না।


১১। বৃষ্টির পানি, বরফের পানি, শিলাগলা পানি ইত্যাদি যাবতীয় পানির হুকুম নদী এবং পুকুরের পানিরই অনুরূপ।


১২। কোন ইন্দিরা, কুয়ায় মানুষের পায়খানা, গোবরাদি পড়লে তার পানি অপবিত্র হয়ে যায়। বকরীর দু’চারটি লাদ পড়লে সাথে সাথে উঠিয়ে ফেললে পানি অপবিত্র হয় না।


১৩। ইন্দিরা বা কূয়ায় কোন জীব-জন্তু পড়ে মরে থাকলে তার পানি অপবিত্র হয়ে যায়। ঐ পানি পবিত্র করতে হলে পতিত জন্তুর আকার, সংখ্যা এবং প্ৰকারভেদে মাসয়ালা অনুযায়ী বিশ, চল্লিশ, ষাট, আশি, একশ বালতি কিংবা সম্পূর্ণ পানি তুলে ফেলে তা পবিত্র করতে হয়।


১৪। পানির ন্যায় খেজুরের রস, ডাবের পানি কলাপাছের পানি, গোলাপ জল, ইক্ষুর রস প্রভৃতিও পবিত্র বস্তু বটে তা দ্বারা অপবিত্র বস্তু ধুলে পাক হয়ে যায়।


১৫। দুধ, ঘি ও তেল তরল পদার্থ হলেও তৈশাক্ততার কারণে এগুলো দ্বারা ধূয়ে কোন অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র করা চলে না।


১৬। জমজমের পানি দ্বারা নাপাক বস্তু ধোয়া মাকরূহ। সুতরাং ঐ পানি দিয়ে কোন মুহদেছ (যাহার ওযু ভঙ্গ হয়েছে) এবং জুনুব (যার ওপর গোসল ফরয হয়েছে) ব্যক্তির ওযু-গােসল করা উচিত নয়। অবশ্য ঐ পানি ব্যতীত অন্য পানি না পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করা যাবে।


১৭। মধু, ঘি, তেল, সিরাপ ইত্যাদিতে নাজাসাত মিশে অপবিত্র হয়ে গেলে নাজাসাত মিশ্রিত বস্তুকে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে জ্বলে দেবে, যখন তা অর্ধেক পরিমাণ হয়ে যাবে। তখন পুনরায় পূর্বোক্ত নিয়মে জ্বলে দিয়ে ঐ পরিমাণ করলে। এভাবে তিনবার করলে ঐ বস্তু পবিত্র হয়ে যাবে।


নাজাসাতে গলীজা ও খফীফা, অপবিত্রা দূর করণের নিয়ম।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!