ওযূর বর্ণনা, প্রকারভেদ ও ফরয, সুন্নত, মোস্তাহাবসমূহ
ওযুর বর্ণনা
পবিত্রতা হাসিলের জন্য ওযুই শ্রেষ্ঠ এবং শেষ পন্থা। কারণ, ওযু করেই অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ ইবাদাত নামায আদায়, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত এবং অন্যান্য সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করতে হয়। বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমান নর নারীর সর্বদা পাক পবিত্র হয়ে থাকা একান্ত কর্তব্য। কারণ, পাক পবিত্র থাকা ইবাদাতের মাঝে গণ্য, শয়তানের ধোঁকা ও ফেরেববাজী থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এতে প্রত্যেক মুসলমানের মন প্রাণ আল্লাহর ভয়ে সচেতন থাকে এবং তার বেহেস্ত গমনের পথ প্রশস্ত করে এবং দােজখের ভীষণ অগ্নির আক্রমণ হতে হিফাজত করে। পাক পবিত্রতার সাথে মৃত্যু হলে ঈমানের সাথে মৃত্যু হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। কারণ, মৃত্যুকালে শয়তান প্রবঞ্চনা দিতে তার নিকট আসতে পারে না। যারা সর্বক্ষণ পাক পবিত্র থাকতে অভ্যস্ত নয় দ্বিতীয়তঃ এতে ততটা আগ্রহীও নয়, তারা শয়তানের ধোঁকা থেকে কিছুতেই রেহাই পায় না। তবে আল্লাহ যাদের বিশেষ অনূগ্রহ করেন এবং তার করুণার দৃষ্টি রাখেন, তারা হয়তো বা রেহাই পেতে পারেন। অন্যথায় তারা কিছুতেই সৎপথের দিশারী এবং নেক আমল করতে সমর্থবান হয় না। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় এবং তাদের জীবনে নেমে আসে বিভীযিকার পদধ্বনি। অতএব, প্রত্যেক মুসলমান ও দ্বীনদার লোকদের অবশ্য কর্তব্য যে, নামাযের সময় ব্যতীত এবং তা আদায়ের কারণ ছাড়াও সর্বদা পবিত্রতার সাথে থাকা। বিশেষ করে জান্নাত প্রত্যাশীদের জন্য এটা করা একান্ত আবশ্যক।
ওযুর প্রকারভেদ
ওযু তিন প্রকার- ১. ফরজ ২. ওয়াজিব ও ৩. মুস্তাহাব।
(ক) কুরআন মাজিদ স্পর্শ করা/পড়া ও নামায পড়ার জন্য ওযু করা করা ফরয।
(খ) কাবা শরীফ তাওয়াফ করার জন্য ওযু করা ওয়াজিব।
(গ) আট সময় ওযু করা মুস্তাহাব। যথাঃ
(ক) নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে,
(খ) ওযু থাকা সত্বেও ওযু করা,
(গ) ওযু ভঙ্গ হওয়া মাত্র ওযু করা,
(ঘ) মিথ্যা বলার পর ওযু করা,
(ঙ) গিবত বলার পর ওযু করা,
(চ) অশ্লীল গান গাওয়ার পর ওযু করা,
(ছ) নামাযের বাহিরে উচ্চস্বরে হাসিবার পর ওযু করা,
(জ) মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিতে যাওয়ার পূর্বে ওযু করা। (হালবীয়ে কবীর)
ওযুর ফরজসমূহ
মানুষের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য মহান আল্লাহ্ তা'য়ালা তার বান্দাদেরকে হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের পাশা পাশি বাহ্যিক পবিত্রতার প্রথম ধাপ হিসেবে ওযুর বিধানাবলী বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মুছেহ কর এবং পদযুগল গিটসহ। (সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
নামায যেহেতু শ্রেষ্ঠ ইবাদাত, সেহেতু আল্লাহ্ তা'য়ালা বান্দাহকে উত্তম রূপে পবিত্রতা লাভ করার নিয়মাবলী বর্ণনা করে দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতের আলোকে ওযুর ৪টি ফরয নিম্নে দেয়া হলো। যথাঃ
১। সম্পূর্ণ মুখ-মণ্ডল ভালভাবে ধৌত করা। অর্থাৎ কপালের উপরিভাগের চুল গজানাের স্থান হতে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালভাবে ধৌত করা।
২। কনুইসহ দু'হাত ভালভাবে ধৌত করা।
৩। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা।
৪। দু'পায়ের ছোট গিরাসহ ধৌত করা।
নামায যেহেতু শ্রেষ্ঠ ইবাদাত, সেহেতু আল্লাহ্ তা'য়ালা বান্দাহকে উত্তম রূপে পবিত্রতা লাভ করার নিয়মাবলী বর্ণনা করে দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতের আলোকে ওযুর ৪টি ফরয নিম্নে দেয়া হলো। যথাঃ
১। সম্পূর্ণ মুখ-মণ্ডল ভালভাবে ধৌত করা। অর্থাৎ কপালের উপরিভাগের চুল গজানাের স্থান হতে থুতনীর নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি হতে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ভালভাবে ধৌত করা।
২। কনুইসহ দু'হাত ভালভাবে ধৌত করা।
৩। মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা।
৪। দু'পায়ের ছোট গিরাসহ ধৌত করা।
ওযুর সুন্নাতসমূহ
১। নিয়ত করা।
২। বিছমিল্লাহ বলে ওযু আরম্ভ করা।
৩। হাতের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
৪। উভয় হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
৫। মিসওয়াক করা।
৬। তিনবার কূলি করা।
৭। তিনবার নাকে পানি দেয়া।
৮। সম্পূর্ণ মুখ-মণ্ডল তিনবার ধৌত করা এবং ঘন দাড়ি খিলাল করা
৯। উভয় হাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করা।
১০। সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
১১। উভয় কান একবার মাসেহ করা।
১২। টাখনু পর্যন্ত উভয় পা তিনবার ধৌত করা।
১৩। পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।
১৪। এক অঙ্গ শুকানাের পূর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
১৫। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওযুর কাজগুলো সম্পূর্ণ করা। প্রথমে ডান দিকের অঙ্গ ধোয়া তারপর বাম দিকের। অজুর শেষে মসনুন ধোয়া পড়া।
ওযুর মুস্তাহাবসমূহ
১। ওযু করার সময় কেবলামুখি হয়ে বসা।
২। নিচু স্থান অপেক্ষা একটু উঁচু স্থানে বসা।
৩। ডান দিক হতে ওযু আরম্ভ করা।
৪। ওযুতে অন্য কােন লোকের সাহায্য না নেয়া।
৫। নামাযের সময় হওয়ার পূর্বে ওযু করা।
৬। ওযুর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
৭। ওযু করার সময় কথা না বলা।
৮। বাম হাত দ্বারা নাসিকা পরিষ্কার করা।
৯। ঘাড় মাসেহ করা।
১০। উভয় কানের পৃষ্ঠদেশ মাসেহ করা।
১১। ওযুর অঙ্গসমূহ্ ভালভাবে ধৌত করা।
১২। আংটি, গহনা নেড়ে-ছেড়ে উক্ত স্থান ভিজিয়ে দেয়া।
১৩। প্রয়োজনের অতিরক্ত পানি খরচ না করে মধ্যম পরিমাণ পানি খরচ করা।
১৪। উভয় পা বাম হাত দ্বারা ধৌত করা।
১৫। ওযুর শেষে কালেমায় শাহাদাৎ পাঠ করা।
১৬। তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায আদায় করা।